নাগরিক জলপত্র (প্রথম খন্ড) | শারমিন আহমেদ

 




বই: নাগরিক জলপত্র (প্রথম খন্ড)

লেখক: শারমিন আহমেদ 

প্রচ্ছদ: সঞ্চিতা সৃষ্টি 

প্রকাশনী: কিংবদন্তী পাবলিকেশন


পুরানো এলাকার ভোরগুলো অদ্ভুত। বয়স্ক পুরুষ মানুষগুলো ছাদে পায়রা ওড়ায়, খাবার দেয়। অধিকাংশ বাড়ির ছাদে বাঁশের চালা দেয়া থাকে। আশেপাশের হিন্দু বাড়িগুলোতে ধূপের মোহনীয় সুবাস নাকে এক স্বস্তি জাগায়। কিন্তু সেটাও বেশিক্ষণ থাকে না। আনাচেকানাচের হোটেলের তেহারি, পরোটা ভাজি আর হালুয়া রান্নার গন্ধে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। শুরুতে এখানে নতুন যারা আসেন বিরক্তি দেখান। ভাবখানা এই, 'ছ্যা! সাতসকালে এসব। এরপর এই সাতসকালে এই গন্ধ তাদের নাকও মেনে নেয়। বাকরখানির পোড়া গন্ধ আর রিকশার টুংটুং শব্দে গলিগুলো জেগে যায়। কলরব আর কোলাহলে মুখরিত হতে থাকে সব। সময়ের সাথে সাথে কোন খাবারের গন্ধের পর কোনটার ঘ্রাণ আসবে, তা এলাকার সবারই প্রায় জানা। তাদের জীবনযাত্রার ধরনও প্রায় এক। রিনির দাদু এই জায়গাটা ওয়ারিশান সূত্রে পেয়েছিলেন। কোনোক্রমে একতলা তিনটে ঘর তুলেই তিনি থাকার ব্যবস্থা করে নিয়েছিলেন। সোবহান সাহেবের ভাই নেই, আছে তিন বোন। বিয়ে হয়ে গেছে তাদের। তাই বাড়িটাতে তিনিই আস্তানা গেড়েছেন। মানে, এটা তার বোনদের ভাষা। যখনই আসেন বেড়াতে বা নিজের সংসারের জ্বালা থেকে খানিক মুক্তি নিতে, একথা না শুনিয়ে ছাড়েন না। তার ভাগ চাননি বলে ভোগ করছে আরামেই, এসব বলে মায়মুনা বেগমকে নাজেহাল করে যান। মধ্যবিত্তদের আনন্দ খাবারদাবারেই সীমিত। ভালোমন্দ বাড়িতে রান্না হলে মায়মুনা তাদেরও ডাকেন সময় বিশেষে। আর হুটহাট চলে এলেও আপ্যায়িত করেন ভালো করেই। তাতে কখনো বেশ রক্ষা হয়।


সোবহান সাহেব নিজের গরজেই দোতলা তুলেছেন। নইলে থাকা যাচ্ছিল না। ছেলেমেয়েরা বড়ো হচ্ছে, তাদের পড়াশোনা, সব মিলিয়েই দরকার ছিল। এসব বাড়ির কোনো প্ল্যান লাগে না। নিজের ইচ্ছেমত কেবল রাজমিস্ত্রি লাগিয়ে রুম তুলে নেয়া। এ বাড়িটাও তাই এক রকম। শুরুতে রাসুর জন্য ঘর তোলা হলো। পরে রিনি আর ঝিনির জন্য আরেকটা। সমু নিচেই থাকত, তার দাদুর সাথে। দাদু মারা যাবার পর থেকে একাই থাকত। আর, রাসু নিখোঁজ হবার পর কবে কখন দোতালায় রাসুর ঘরে শিফট হয়েছে। কেউ মনে রাখেনি। রাসুর অন্তর্ধানে সবাই এতটা মুষড়ে পড়েছিল যে, পারিপার্শ্বিকতার দিকে কারোই নজর ছিল না বললেই চলে।



Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

buttons=(Accept !) days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !