বইয়ের নাম : সাতকাহন
লেখক : সমরেশ মজুমদার
গার্লস স্কুলে পড়া বেশির ভাগ মেয়ের মতো প্রচণ্ড পুরুষ বিদ্বেষী ছিলাম কৈশোরে। ভাবতাম পুরুষ মাত্রই সম্ভাব্য ধর্ষক। জীবনে কখনও বিয়ে করব না। সারাজীবন একা থাকবো। সেই সময়ে এই বইটা পড়লে একদম "Icing on the pie" এর মতো হতো ব্যাপারটা।
কিন্তু বইটা যখন পড়েছি ততদিনে মানসিক পরিপক্কতা এসে গেছে। নারীবাদ আর পুরুষ বিদ্বেষের মধ্যে যে কিছু সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে, সেটা বুঝতে শিখেছি। সেজন্যই হয়তো প্রথম দিকে যতটা ভালো লাগা নিয়ে পড়ছিলাম, শেষ দিকে ততটাই হতাশ হয়েছি।
সাতকাহন দীপাবলি নামের একজন অদম্য সাহসী বালিকার নারী হয়ে ওঠার গল্প। ভাগ্যের বিপরীতে সংগ্রাম করে নিজের আলোয় আলোকিত হবার গল্প।
শুরুর দিকে যখন পড়ছিলাম, চোখের সামনে জলপাইগুড়ির চা বাগানের দৃশ্য ভাসছিলো যেন। অদ্ভুত মুগ্ধতা নিয়ে পড়তে থাকি । কিন্তু পড়া শেষ করার পর মনে হয়েছে কিছু কিছু জায়গায় দীপাবলির আত্মসম্মানবোধ অহমিকা পর্যায়ে চলে গেছে। অলোকের কিছু ভুল শুধরে দেওয়ার সুযোগ তার ছিল; কিন্তু সে সেসব ভুলকে শুধরানোর পরিবর্তে আরও উস্কে দিয়ে অবশেষে সেসব ভুলের অজুহাতে তাকে ছেড়ে চলে যায়। দীপাবলিকে নিজের জীবনে রাখতে অলোক যথেষ্ট চেষ্টা করে শেষ দিকে। আমার মনে হয়েছে লোকটাকে আরেকবার সুযোগ দেওয়াই যেতো।
অর্জুন নায়েক চরিত্রটা বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছে। সব মিলিয়ে বইটা ভালোই, তবে আমার মতে এখানে কিছু ভুল বার্তা ছিল। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি জীবনের কিছু ক্ষেত্রে ট্রেডঅফ করতেই হয়; সেটা হোক নারীর কিংবা পুরুষের, কিংবা প্রতিষ্ঠানের, কিংবা রাষ্ট্রের।
তবে একটা বিষয় স্বীকার করতেই হবে, বইটা পড়ার সময় পাঠক ভীষণ ভাবে আলোড়িত হতে বাধ্য!