বইঃ হেডহান্টারস
লেখকঃ জো নেসবো
অনুবাদঃ শাহেদ জামান
প্রকাশনীঃ বাতিঘর
কাহিনি সংক্ষেপঃ রজার ব্রাউন নরওয়ের সেরা হেডহান্টার। তার কাজই হলো বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রধান ব্যক্তিদের নির্বাচন করা। নিজের কাজে সে সবসময়ই সেরা। সুন্দরী স্ত্রী ডায়ানাকে নিয়ে প্রাসাদোপম এক বাড়িতে বসবাস রজারের। নিজের কাজে এই মানুষটা এতোটাই স্বনামধন্য যে, কোন প্রতিষ্ঠানই তার সুপারিশ পায়ে ঠেলার কথা চিন্তাও করেনা। এহেন সফল রজারের একটা গোপন পেশাও আছে। আর তা হলো বিখ্যাত শিল্পীদের আঁকা ছবি চুরি করা।
রজার ব্রাউনের জীবনটা যেন এক চুটকিতে বদলে যাবে তা হয়তো সে নিজেও জানতোনা। স্ত্রীর মাধ্যমে পরিচিত হওয়া সাবেক প্রযুক্তি জগতের টাইকুন ক্লাস গ্রিভের বাড়িতে একটা ছবি চুরি করতে গিয়ে ভয়াবহ এক সত্য আবিস্কার করে ফেলে সে। এমন এক সত্য যা তার পুরো পৃথিবীটাকেই ওলটপালট করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। হলোও তাই। এদিকে চিরচেনা প্রিয়তমা স্ত্রী ডায়ানাকেও যেন রজার আর চিনতে পারছেনা। একদম পালটে গেছে মেয়েটা। ভয়াবহ ব্যাপারটা শুরু হলো তখনই যখন নরওয়ের সেরা হেডহান্টারকে খুন করার জন্য কেউ একজন পেছনে লাগলো।
স্বাভাবিকভাবে শুরু হওয়া একটা সকাল থেকেই যেন রাতারাতি পালটে যেতে লাগলো পুরো পরিস্থিতি। বাধ্য হয়ে এমন কিছু কাজ রজার ব্রাউনকে করতে হলো যা কখনো সে স্বপ্নেও চিন্তা করেনি। শুরু হলো ছুটে চলা। কেউ নেই পাশে। এদিকে পেছনে লেগে রয়েছে ভয়াবহ নাছোড়বান্দা এক খুনী। যেকোন মূল্যে রজারকে খুন করাই যার একমাত্র মিশন। একবার-দুবার না, বারবার তার ওপর প্রাণঘাতী হামলা হতে লাগলো। আর এই সব কিছুর সাথে যেমন তার স্ত্রী ডায়ানার সম্পর্ক আছে, তেমনই সম্পর্ক আছে লোটি ম্যাডসেন নামে রহস্যময়ী এক তরুণীরও।
রজার ব্রাউনের সাথে ঘটে যেতে থাকা একের পর এক রুদ্ধশ্বাস ঘটনা একটা সময় তার সামনে অবাক করা কিছু বিষয় জীবনে প্রথমবারের মতো তুলে ধরলো। পুরো নাটকটা নিছক কোন ত্রিভুজ প্রেমকে কেন্দ্র করে মঞ্চায়িত হচ্ছেনা, বরং সবকিছুর পেছনে আছে তার চেয়েও ভয়ঙ্কর কোন ব্যাপার। পুরো সত্যটা আবিস্কারের জন্য হেডহান্টার সাহেবকে প্রথমে বেঁচে থাকতে হবে। আর সেটাই এখন তার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ নরওয়ের জনপ্রিয় থ্রিলার লেখক জো নেসবোর কোন লেখা এর আগে পড়ার সুযোগ ঘটেনি। 'হেডহান্টারস' তাঁর জনপ্রিয় উপন্যাসগুলোর মধ্যে অন্যতম। একজন সাধারণ করপোরেট পার্সন থেকে প্রাণ বাঁচাতে বেপরোয়া হয়ে ওঠা একজন মানুষের গল্প বেশ দারুনভাবে তাঁর এই থ্রিলার উপন্যাসে বলে গেছেন জো নেসবো।
এই উপখ্যানে একই সাথে উঠে এসেছে করপোরেট দুনিয়ার সাথে সম্পর্কিত নানা বিষয়াদি। শুরুর দিকে এই ব্যাপারগুলো নিয়ে জ্ঞানগর্ভ 'কচকচানি' একটু বেশি থাকায় সামান্য বোরিং লাগাছিলো উপন্যাসটা। কিন্তু ৫০ তম পৃষ্ঠা পার করার পর থেকেই যেন জমে উঠলো পুরো গল্পটা। ধীরে ধীরে শ্বাসরুদ্ধকর একটা দিকে মোড় নিতে লাগলো কাহিনি। তারপর কিভাবে একটানে বইটা শেষ হয়ে গেলো, তা আমি নিজেও বুঝতে পারিনি। বলা বাহুল্য যে দারুনভাবে উপভোগ করেছি 'হেডহান্টারস'।
একের পর এক টুইস্ট এসেছে বইটা পড়তে গিয়ে। একটার রেশ পুরোপুরি কাটতে না কাটতেই অকস্মাৎ সামনে এসে হাজির হওয়া আরেকটা টুইস্ট। এমনই ছিলো ব্যাপারটা। একেবারে শেষ দিকে এসে জো নেসবো যে টুইস্টটা দিয়েছেন তা একইসাথে আমাকে যেমন বিস্মিত করেছে তেমনই কিছুটা বিরক্তও হয়েছি। বিরক্ত যে কেন হয়েছি সেটা আমার নিজের কাছেও পরিস্কার না। সম্ভবত এতোটা প্যাঁচানো কিছু আশা করিনি, এই কারণেই হয়তোবা।
অনুবাদক শাহেদ জামানের অন্যান্য অনুবাদকর্মগুলোর মতো 'হেডহান্টারস'-এর অনুবাদও যথেষ্ট সুখপাঠ্য ছিলো। বাংলা অনুবাদ সাহিত্যে তিনি সত্যিই এক দারুন প্রতিভা। সামান্য মাত্রায় টাইপিং মিসটেক লক্ষ্য করেছি। ডিলান সাহেবের প্রচ্ছদটা চমৎকার লেগেছে। ২০১৭ সালের অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হওয়া থ্রিলারটা অনেকেই পড়ে ফেলেছেন, জানি। যারা পড়েননি, চাইলে পড়ে ফেলতে পারেন।
বইটি ডাউনলোড করতে
[ এখানে ক্লিক করুন ]