রেড পিরামিড - রিক রিওর্ড্যান

 


বইঃ রেড পিরামিড

লেখকঃ রিক রিওর্ড্যান


রেড পিরামিড ২০১০ সালে প্রকাশিত ফ্যান্টাসি এডভেঞ্চার জনরার উপন্যাস। মিশরীয় মিথলজির ওপরে ভিত্তি করে এই উপন্যাসটি লেখা হয়েছে। উপন্যাসটি লিখেছেন রিক রিওর্ড্যান। এটি কেইন ক্রনিকলস সিরিজের প্রথম উপন্যাস।


এই বইয়ের মূল চরিত্রে আছেন দুজন। তারা সম্পর্কে ভাই-বোন। একজনের নাম কার্টার কেইন। আরেকজনের নাম সেডি কেইন। উপন্যাসের এক পর্যায়ে তারা আবিষ্কার করে যে, তাদের পুর্বপুরুষ হচ্ছে ফারাও এবং প্রাচীন মিশরের জাদুকরেরা।


ফারাও এবং প্রাচীন মিশরের জাদুকরদের বংশধর হওয়ার ফলে যা হয়, তা হচ্ছে, তারা দুজনেই নিজেদের শরীরে দেবতাদেরকে হোস্ট করতে পারে। মানে, দেবতারা ওদের দেহে ভর করতে পারে। এবং, সেইসাথে ওরা দুজনেই জাদুশক্তি ব্যবহার করতে পারে। এই দুজন নিজেদের অজান্তে নিজেদের দেহে মিশরীয় দেবতা হোরাস এবং আসিসিসকে হোস্ট করে। অন্যদিকে, ওদের বাবাকে হোস্ট করে দেবতা ওসাইরিস। এই ওসাইরিসকে আবার বন্দী করে দুষ্ট কাজের দেবতা সেট।


ওদের বাবা যেহেতু সেট এর হাতে বন্দী... এর ফলে, কার্টার কেইন এবং সেডি কেইন একটা রেসকিউ মিশনে জড়িয়ে যায়...। যেখানে ওদের দুটো উদ্দেশ্য। এক, বাবাকে উদ্ধার করা, দুই, দুনিয়াকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানো।


তো... উপন্যাসের শুরুতে ফিরে যাই। সেখানে দেখা যায়, কার্টার এবং তার বাবা জুলিয়াস কেইন যায় কার্টারের বোন সেডির সাথে দেখা করতে। সেডির মা হচ্ছে রুবি কেইন। মা মারা যাওয়ার পরে থেকে সেডি তার নানা-নানীর সাথে লন্ডনে থাকে। কার্টার-সেডির বাবা জুলিয়াস কেইন আসলে একজন ম্যাজিশিয়ান। কিন্তু তিনি লোক-সমাজে নিজের পরিচয় দেন একজন সাধারণ ইজিপ্টোলজিস্ট হিসেবে। তিনি তার দুই সন্তান, কার্টার এবং সেডিকে নিয়ে যান ব্রিটিশ মিউজিয়ামে। সেখানে গিয়ে তিনি দেবতা ওসাইরিসকে (পাতাল দুনিয়ায় দেবতা) মানুষের জগতে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। কিন্তু এই কাজ করতে গিয়ে তিনি একটা ঘাপলা করে ফেলেন। তিনি অনিচ্ছাকৃতভাবে চারজন দেবতাকে তলব করে ফেলেন। তারা হচ্ছেন যুদ্ধ দেবতা হোরাস, জাদুর দেবী আইসিস, নদী দেবি নেফথিস এবং মন্দ কাজের দেবতা সেট। এতে করে বাজে একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ম্যাজিশিয়ানদের সমাজে এভাবে দেবতাদেরকে তলব করাটা অবৈধ। শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ম্যাজিশিয়ানদের সোসাইটি থেকে তাই জিয়া রশিদ এবং মিশেল দেসজার্ডিনস ছুটে যায় ওদেরকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে।


ব্রিটিশ মিউজিয়ামে জুলিয়াস কেইন যেই ম্যাজিক করেন, তাতে মন্দ কাজের দেবতা সেট মুক্ত হয়ে পড়ে। সেট বন্দী দশা থেকে মুক্ত হয়েই জুলিয়াসকে বন্দী করে এবং ঘোষণা দেয় যে, তার ইচ্ছে সে পুরো দুনিয়ায় একচ্ছত্র রাজা হবে। কার্টার এবং সেডির অজান্তে, মুক্তি পাওয়া চারজন দেব-দেবীর প্রত্যেকে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের ওই রুমে থাকা একজন করে মানুষকে নিজেদের হোস্ট হিসেবে বেছে নেয়। কার্টারকে হোস্ট করে হোরাস। এবং সেডিকে হোস্ট করে দেবী আইসিস।

.

ব্রিটিশ মিউজিয়ামের ঘটনার পরে কার্টার এবং সেডিকে তাদের চাচা আমোস ব্রুকলিনে নিয়ে আসেন। তিনি তাদেরকে জানান যে, তারা ম্যাজিশিয়ান এবং ফারাওদের বংশধর। তাদের পূর্বপুরুষ ছিলেন রামেসিস দ্য গ্রেট এবং নার্মার। তিনি সেইসাথে ওদের কাছে ব্যাখ্যা করেন যে সেট কিভাবে পুরো দুনিয়াকে মারাত্মক বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে এবং তিনি যাচ্ছেন সেটকে খুঁজে বের করতে। তো, তিনি এরপরে ব্রুকলিন ম্যানশন থেকে চলে যান।

.

ব্রুকলিন ম্যানশন থেকে তিনি যখন চলে গেলেন, তারপরে সেট-এর গুন্ডা পান্ডারা ম্যানশনে হামলা চালায়। সেডির পোষা বিড়াল মাফিন (যে কিনা আসলে বিড়াল দেবী বাস্ট) এবং জিয়া রশিদের সাহায্য নিয়ে কার্টার এবং সেডি কায়রোতে পালিয়ে যায়। ওখানে পৌঁছানোর পরে, তারা আবিষ্কার করে যে তাদের দেহে দেব-দেবী ভর করেছে। দেব-দেবীরা তাদের দেহকে অধিগ্রহণ করতে পারে। কার্টারের দেহে ভর করেছে যুদ্ধ দেবতা হোরাস এবং সেডির দেহে ভর করেছে জাদুর দেবী আইসিস।

.

কায়রোতে ওরা জাদুবিদ্যার ওপরে প্রশিক্ষণ নিতে থাকে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ম্যাজিশিয়ানদের নেতা ইসকান্দার মারা যাওয়ার পরে মিশেল দেসজার্ডিনস জাদুকরদের সংগঠন হাউজ অফ লাইফের নেতৃত্বের ভার নিলেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, দেবতাদের সাথে অবৈধভাবে যুক্ত হওয়ার জন্য কার্টার এবং সেডিকে মেরে ফেলতে হবে। কার্টার এবং সেডি এই অবস্থায় কায়রো থেকে পালিয়ে গেল, এবং একটা পরিকল্পনা করল যে, কিভাবে সেটকে পরাজিত করা যায়। ওরা আশা করছে, এই পরিকল্পনা সাফল্যের সাথে সম্পাদন করতে পারলে তারা বাবাকে উদ্ধার করতে পারবে এবং নিজেদের নামে যে মৃত্যু পরোয়ানা জারি হয়েছে তার হাত থেকেও রেহাই পাবে। ওরা এরিজোনাতে সেট এর আস্তানার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। ওরা জাদুমন্ত্র সম্পাদনের জন্য যেই সব জিনিসপাতি লাগবে, সেগুলো জোগাড় করে। যাত্রাপথে বিভিন্ন সময় নানান মনস্টার এবং ম্যাজিশিয়ানদের সাথে ওদের লড়াই হয়। 

.

দেবতা সোবেক এর সাথে ওদের যুদ্ধ হয়। সোবেক এর হাত থেকে কার্টার এবং সেডিকে রক্ষা করতে গিয়ে বাস্ট নিজেকে স্যাক্রিফাইস করে। এরপরে ওরা আমোস এবং পরে জিয়ার সাথে মিলিত হয়। চারজনে মিলে তারা সেট-এর আস্তানার দিকে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হয়। তবে, তারা সেটকে পুরোপুরি পরাজিত করতে পারে না। ব্যর্থ হয়। তারা আবিষ্কার করে, সেট এর চেয়ে আরও অনেক বেশি শক্তিশালী আরেকজন দেবতা, যার নাম আপোফিস, তাঁকে এতদিন যাবত চালিত করে আসছিল। এই আপোফিস হচ্ছে বিশৃঙ্খলার দেবতা।

.

এরপরে যা হয়, হোরাস এবং আইসিস যখন ওদের দেহ থেকে আলাদা হয়ে যায়, তখন দেসজার্ডিনস অনিচ্ছাসত্বেও কার্টার এবং সেডিকে বিনা বাধায় ওখান থেকে চলে যাওয়ার অনুমতি দেন।

.

এরপরে কাহিনীর এক পর্যায়ে অশ্রুসজল চোখে জিয়াকে বিদায় দেয় কার্টার এবং সেডি। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই আবিষ্কার হয় যে, যাকে ওরা বিদায় দিয়েছে, ওটা মোটেও আসল জিয়া রশিদ ছিল না। ওটা হচ্ছে জিয়া রশিদের একটা ম্যাজিকাল কপি। কার্টার এবং সেডি ব্রুকলিনে ফিরে যায়। ওরা ওদের বাবার সাথে সাক্ষাৎ করে, এখন তিনি আছেন পাতাল দুনিয়ায়, তাদের ভূত হয়ে যাওয়া মায়ের সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছেন। একটা উপহার হিসেবে, ওসাইরিস ( যে কিনা জুলিয়াসের দেহকে হোস্ট করেছিল) এবং অন্যান্য দেবতারা সেডির বন্ধু বাস্টকে সাহায্য করে মানুষের দুনিয়ায় আবারও ফিরে আসার ব্যাপারে। বাস্ট মানুষের দুনিয়ায় ফিরে আসে।

.

কার্টার এবং সেডি জানায় যে, এবার তাদের পরিকল্পনা হচ্ছে, তারা অন্যান্য ম্যাজিশিয়ানদেরকে রিক্রুট করবে (যদিও ব্যাপারটা অবৈধ) এবং দেবতাদের গতিপথ স্টাডি করবে। কার্টার ব্যক্তিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেয় যে, সে সত্যিকারের জিয়া রশিদের সন্ধানে বের হবে।

.

উপন্যাসের দুটো মূল চরিত্র হচ্ছে কার্টার কেইন এবং সেডি কেইন।

কার্টার কেইন সম্পর্কে যা বলা যায়, তা হচ্ছে, তার বয়স চৌদ্দ বছর। সে জুলিয়াস কেইন এবং রুবি কেইনের সন্তান। মায়ের মৃত্যুর পরে তাঁকে বাবার সাথে ছয় বছর ধরে বিভিন্ন অদ্ভুত অদ্ভুত স্থানে থাকতে হয়েছে। জাস্ট একটা সুটকেসের ভেতরে তার সব জিনিসপত্র থাকত। কার্টারের চেহারা কালচে রঙের। কালচে-বাদামী রঙের কোঁকড়ানো চুলের অধিকারী সে। চোখ জোড়া বাদামী রঙের। তার দেহে ফারাওদের রক্ত বইছে। সে রামসেস দ্য গ্রেট এবং নার্মারের বংশধর। তার দেহে যুদ্ধ দেবতা হোরাস ভর করে থাকে। কার্টারের বিশেষত্ব হচ্ছে সে কমব্যাট ম্যাজিকে দক্ষ এবং অস্ত্র হিসেবে খোপেশ পছন্দ করে। খোপেশ হচ্ছে এক ধরনের তলোয়ার।

.

এবার আসি সেডি কেইনের ব্যাপারে। সেডি কেইনের বয়স বারো বছর। সে কার্টারের বোন। জুলিয়াস কেইন এবং রুবি কেইনের মেয়ে। তার বয়স যখন ছয় বছর, তখন তার মা রুবি কেইন মারা যায়। সেই থেকে সে লন্ডনে তার নানা-নানীর সাথে আছে। তার চোখের রং নীলাভ। চুল ক্যারামেল রঙের। কার্টারের তুলনায় সে ভীষণ রকম ডানপিটে। কার্টারের থেকে দুই বছরের ছোট হলেও সে কার্টারকে একেবারেই পাত্তা দেয় না। বরং ওকে সারাক্ষণ ধরে খুব উত্যক্ত করতে থাকে। তবে ভাইকে সারাক্ষণ ক্ষ্যাপালেও সে ভাইয়ের ব্যাপারে খুব কেয়ার করে।


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

buttons=(Accept !) days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !