তোত্তো-চান | তেৎসুকো কুরোয়ানাগি

 



বইটি লিখেছেন জাপানের অন্যতম জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব তেৎসুকো কুরোয়ানাগি ১৯৮১ সালে। যেখানে তিনি নিজের ছেলেবেলার স্কুল জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। প্রকাশের পরপরই বইটি জাপানে ব্যাপক সাড়া ফেলে, বেস্টসেলার বইয়ের তালিকায় নাম লেখায়। অনেক ভাষায় বইটা অনূদিতও হয়েছে। 


ডরোথি ব্রিটন কর্তৃক ইংরেজি ভাষায় অনূদিত "তোত্তো-চান: দ্য লিটল গার্ল অ্যাট দ্য উইন্ডো" বই থেকে অনুবাদ করেছেন মৌসুমী ভৌমিক।


শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কত সুন্দর সব চিন্তাভাবনা করা সম্ভব; তা জানতে এই বইটি বাবা-মা, শিক্ষক ও সকল ধরনের মানুষের জন্যই অবশ্যই পাঠ্য একটি বই বলে আমি মনে করছি।


বইটিতে লেখিকা ৬৩ টি ছোট ছোট ভাগে তাঁর স্মৃতিকথা গুলো অবতারণা করেছেন।


গল্পের বক্তা তোত্তো-চান এত্তো দুষ্ট ছিলো যে, দুরন্তপনায় জন্য তাকে তার আগের বিদ্যালয়ে থাকার সুযোগ দেয়নি। তাকে নতুন করে ভর্তি করা হয়, সোসাকু কোবায়াশী'র 'তোমোই গাকুয়েন' বিদ্যালয়ে। এ বিদ্যালয়টি ছিলো প্রতিটি শিশুর স্বপ্নের মতো এক বিদ্যালয়।


তোত্তো-চানকে তার নতুন বিদালয়ের প্রধান শিক্ষক কোবায়াশী বলেন, তুমি সত্যিই খুব ভালো মেয়ে। তিনি তোত্তো-চানকে এতোবার এই কথাটি বলেন যে, তোত্তো-চানের নিজেরও মনে হতো সে খুব ভালো মেয়ে। যেহেতু সে খুব ভালো মেয়ে, তাই কোনো খারাপ কাজ সে করতে পারবে না! 


কিন্তু আমাদের স্কুল গুলোতে কি হতো একবার ভাবুন তো!!


তোমোই গাকুয়েন বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষ ছিলো রেলগাড়ির কামরায়। সোসাকু কোবায়াশী ছিলেন একজন অসাধারণ শিক্ষক যার চিন্তাচেতনা ছিলো যুগান্তকারী। তিনি যেমন ভালোবাসতেন তোত্তে-চানের মতো চঞ্চল শিশুকে, তেমনি ভালোবাসতেন ইয়াসুয়াকিকে যে ছিলো পোলিও রোগে আক্রান্ত। কোবাইয়াশি তাঁর শিশুদেরকে এতোই ভালোবাসতেন যে, তিনি তাকাহাশি, যে বামনত্ব রোগাক্রান্ত ছিলো, সে যেন বিদ্যালয়ের বার্ষিক খেলায় অংশগ্রহণ করতে পারে এবং কোনোরকম অবজ্ঞার স্বীকার না হয়, তাই তাকে বিদ্যালয়ের বার্ষিক খেলায় প্রথম করার জন্য নতুন পদ্ধতির খেলা তৈরি করেছিলেন।


তাঁর সবকিছুই ছিল অভিনব। তিনি শিশুদেরকে 'সাগর থেকে কিছু, পাহাড় থেকে' কিছু নিয়ে আসা খাবার দিয়েই টিফিন খাওয়াতেন। খাবারের সময় চুপ না থেকে কীভাবে গান গেয়ে কথা বলে খাবার খাওয়া যায় তা শিখিয়েছিলেন। এমনি সব চমৎকার পদ্ধতির মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন।


মানুষ দুটো চোখ নিয়ে জন্মাবে , কিন্তু পৃথিবীর সৌন্দর্য দেখতে শিখবে না। কান নিয়ে জন্মাবে কিন্তু সংগীত শুনতে শিখবে না। মস্তিক নিয়ে জন্মাবে কিন্তু সত্যের চর্চা করা শিখবে না। হৃদয় নিয়ে জন্মাবে কিন্তু তাতে আপাত অপ্রয়োজনীয় সব ভালোবাসা থাকবে না। এরকম সমাজ তৈরি হওয়া খুবই ভয়ংকর হবে ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য। এসব ভেবে ভয় পেতেন প্রধান শিক্ষক সোসাকু কোবায়াশী। তাই তিনি স্বপ্নের বিদ্যালয় তোমোই গাকুয়েন তৈরি করেছিলেন। একটি শিশুর মানবিক গুন গুলো বিকাশের জন্য যা প্রয়োজন তার সবকিছুই বিদ্যমান ছিল তোমোই গাকুয়েন বিদ্যালয়ে।


শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া উচিত মানবতা, নৈতিকতা ও সৌন্দর্যবোধ তৈরি করা; কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা তা তো করেই না, বরং তৈরি করে চলেছে প্রতিনিয়ত স্বার্থপর মানব। 


তোত্তে-চান, মিয়ো-চান, ইয়াসুয়াকি, তাকাহাশি...সহ বাকীরা জীবনে কে কি হয়েছিলো তা জানতে বইটি শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে আপনাদের। পড়তে পড়তে আপনার হঠাৎ করে মনে হবে আমি কেনো এমন একটা স্কুলে পড়তে পারলাম না! আমাকে কেন কেউ এ ছোট ছোট বিষয় গুলোতে এতো সুন্দর করে অভ্যস্ততা তৈরি করে দেয় নি! 



Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

buttons=(Accept !) days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !