রাশিয়ার চিঠি | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 




বইয়ের নাম : রাশিয়ার চিঠি

লেখক : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

প্রকাশনী :শব্দশিল্প

পৃষ্ঠা সংখ্যা :১১২


বইটি রচনার প্রেক্ষাপট :

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ নিমন্ত্রণ পান রাশিয়া সফরের। কিন্তু বাধা দেন তার ইংরেজ বন্ধুরা।অবশেষে তাদের বাধাকে উপেক্ষা করে তিনি রওয়ানা হন রাশিয়ার পথে।১১সেপ্টেম্বর ১৯৩০ কবিগুরু মস্কো আসেন ও সেখানে ১৫দিন অবস্থান করেন।ভ্রমণের ঝোঁক ছিল কবিগুরুর ছোটবেলা থেকেই।সে হিসেব পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে তিনি বহুবার গমন করেছেন।ঐসব দেশের পূজিবাদী সমাজব্যবস্থা কীভাবে অর্থের জন্য মানুষের মনুষ্যত্বকে গ্রাস করেছিল তা তিনি নিজ চোখে অবলোকন করেছেন। আর রবীন্দ্রনাথের মত একজন মহাপুরুষ যদি রাশিয়া ভ্রমণ করে তার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে মতামত ব্যক্ত করেন,তাহলে সারা বিশ্বের বুদ্ধিজীবী মহলে তার প্রভাব পড়বে কতটুকু তা আন্দাজ করতে পেরেছিল তা ইংরেজ বন্ধুরা -আর এখানেই ছিল

রবীন্দ্রনাথের প্রতি রাশিয়া ভ্রমণের নিষেধের কারণ।ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষে তখন রাশিয়া সম্বন্ধে যে খবর পৌছত তা ছিল মিথ্যা ও বিদ্বেষে ভরপুর। তাই সোভিয়েট রাশিয়ার প্রকৃত অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে রবীন্দ্রনাথ পাড়ি দেন রাশিয়ার পথে।

সেখানে ১৫দিন অবস্থান করে তিনি বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করেন ও সাক্ষাৎ করেন বিভিন্ন মানুষের সাথে।

পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনার দ্বারা জানার চেষ্টা করেন রাশিয়ার প্রকৃত অবস্থা। আর বলা যায় সেই প্রেক্ষাপটেই রচিত রাশিয়ার বইটি।


মূল বিষয় : 

রাশিয়ার চিঠি বইটিতে মূলত কবিগুরু তা রাশিয়া ভ্রমনের অনুভূতি ও অক্টোবর বিপ্লবের মাধ্যমে পাওয়া নতুন রাশিয়ার অবস্থা বর্ণনা করেন।জার শাসনামলে যে দেশটি ছিল দারিদ্রপীড়িত, শোচনীয় ও পিছিয়ে পড়া মাত্র ১৩ বছরের ব্যবধানে বলশেভিকদের অক্টোবর বিপ্লবের মাধ্যমে পাওয়া নতুন রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা কীভাবে রাশিয়াকে ম্যাজিকের মতো আগাগোড়া পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে,তা রাশিয়ার চিঠি বইটি পাঠের দ্বারা অনুমান করা যায়।

দরিদ্র থেকে দরিদ্রতরদেরকে কীভাবে শিক্ষার দ্বারা তারা জাগিয়ে তুলেছে তা বইটি পড়ে কিছুটা হলেও অনুধাবন করা যাবে।এছাড়া কবিগুরু জায়গায় জায়গায় রাশিয়ার প্রেক্ষাপটে নিজ মাতৃভূমি ভারতবর্ষের অবস্থা ব্যক্ত করেছন।

তুলনামূলকভাবে আলোচনা করেছেন ভারতবাসীর দু:খ দুর্দশার কারণ।সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে যে মিলবন্ধন তৈরী হয়েছে সোভিয়েট রাশিয়ায় তা প্রত্যক্ষ করে তিনি বর্ণনা করেন, 

            "এখানে এসে সবচেয়ে যেটা আমার চোখে ভালো   

             লেগেছে সে হচ্ছে এই ধন গরিমার ইতরতার সম্পুর্ন 

             তিরোভাব।কেবলমাত্র এই কারণেই এদেশে  

             জনসাধারণের আত্মমর্যাদা একমূহুর্তে অবারিত  

             হয়েছে।চাষাভুষা সকলেই আজ অসম্মানের বোঝা 

             ঝেড়ে ফেলে মাথা তুলে দাড়াতে পেরেছে।এইটে  

             দেখে আমি যেমন বিস্মিত তেমনি আনন্দিত হয়েছি।

             মানুষে মানুষে ব্যবহার কি আশ্চর্য হয়ে গেছে!"


আবার চাষাভুষার মধ্যে রাশিয়ায় শিক্ষার যে অগ্রগতি হয়েছে সেটা দেখে কবিগুরু বলেন, 

            "যখন শুনেছিলুম এখানে চাষী ও কর্মীদের মধ্যে 

            শিক্ষা হু হু করে এগিয়ে চলছে,আমি ভেবেছিলুম সে 

            শিক্ষা বুঝি সামান্য একটুখানি পড়া -লেখা ও অংক 

            কষা,কেবলমাত্র মাথা গুনতিতেই তার গৌরব।

            কিন্তু এখানে দেখলুম বেশ পাকা রকমের শিক্ষা মানুষ 

            করে তোলবার উপযুক্ত, 

            নোট মুখস্থ করে এম.এ. পাশ করার মত নয়।"


এছাড়া ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের শিক্ষা ব্যবস্থার অক্ষমতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন,

            "রাশিয়ার সমস্ত দেশ প্রদেশকে জাতি-উপজাতিকে 

            সক্ষম ও শিক্ষিত করে তোলবার জন্যে এতো বড়ো 

            সর্বব্যাপী অসামান্য অক্লান্ত উদ্যোগ আমাদের মতো 

            ব্রিটিশ সাবজেক্টের শুধুর কল্পনাতীত।"

এছাড়া আরেক জায়গায় নিজ মাতৃভূমি ভারতবর্ষের প্রসঙ্গে তিনি বলেন-

        "সোভিয়েট শাসনের অন্তর্গত বর্বরপ্রায় প্রজার মধ্যে 

         শিক্ষাবিস্তারের জন্য এরা যে প্রকৃষ্ট প্রনালীর ব্যবস্থা 

        করেছে,ভারতবর্ষের জনসাধারণের পক্ষে তা দূর্লভ। "


মোটকথা বলা যায়, বইটি পাঠ করলে রাশিয়ার তৎকালীন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে যেকেউ সম্যক অবগত হতে পারবে,পাশাপাশি জানতে পারবে কবিগুরুর দৃষ্টিতে ভারতবাসীর পিছিয়ে থাকার কারণ।


পাঠ প্রতিক্রিয়া :


রবীন্দ্রনাথের অন্য কোনো৷ বইয়ে আমি এতটা সহজ সরল ভাষায় কোনোকিছুর বর্ণনা পাইনি।

কিন্তু রাশিয়ার চিঠি বইটিতে তিনি অত্যন্ত সহজ সরল প্রকাশভঙ্গিমায় যে বর্ণনা দিয়েছেন সোভিয়েত রাশিয়ার, তা এককথায় অসাধারণ বলা যায়।



Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

buttons=(Accept !) days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !