গন ফর গুড - হারলান কোবেন

 


বইঃ গন ফর গুড

মূলঃ হারলান কোবেন

অনুবাদঃ সালমান হক

প্রকাশকঃ চিরকুট

প্রকাশকালঃ জুলাই, ২০২০

ঘরানাঃ মিস্ট্রি/থ্রিলার/সাসপেন্স

প্রচ্ছদঃ সজল চৌধুরী

পৃষ্ঠাঃ ৩৫২

মুদ্রিত মূল্যঃ ৪৫০ টাকা

ফরম্যাটঃ হার্ডকভার


কাহিনি সংক্ষেপঃ ছোটবেলা থেকে উইল ক্লেইনের আইডল তার বড় ভাই কেইন ক্লেইন। কেইন তার রক্ষাকর্তাও বটে। জীবনে যতোবারই কোন ঝামেলায় জড়িয়েছে উইল, তার বড় ভাই তাকে রক্ষা করেছে সবসময়। কিন্তু সমস্ত হিসাব পাল্টে যায় এক লহমায়। উইলের গার্লফ্রেন্ড জুলি মিলারকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় তাদের বাড়ির বেজমেন্টে। সেখানে মেলে কেইনের রক্তও। স্বাভাবিকভাবেই জুলিকে খুন করার দায়ে অভিযুক্ত করা হয় কেইনকে। সন্দেহটা আরো পাকাপোক্ত করতেই যেন পালিয়ে যায় কেইন। নিজের পুরো পৃথিবীটাই যেন ওলটপালট হয়ে যায় উইলের। ওর পুরো পরিবারটার মুখ থেকে মুছে যায় হাসি, হারিয়ে যায় স্বাভাবিকত্ব।


১১ বছর পার হয়ে গেছে৷ কেইন এখনো পলাতক। উইল ও তার পরিবার বিশ্বাস করে, মারা গেছে তাদের বড় ছেলে কেইন ক্লেইন। কিন্তু উইল এখনো ভেতরে ভেতরে বিশ্বাস করে, বেঁচে আছে ওর বড় ভাই। আর তার এই বিশ্বাসের স্বপক্ষে প্রমাণও পেয়ে যায় সে। এদিকে তার বর্তমান প্রেমিকা শিলা রজার্স হঠাৎ-ই কাউকে কিছু না জানিয়ে স্রেফ বাতাসে মিলিয়ে যায়। খোদ এফবিআই আগ্রহী হয়ে ওঠে শিলা'র অন্তর্ধানের ব্যাপারে। কেন এমন হচ্ছে, মাথায় ঢোকে না উইলের। বন্ধু স্কয়ার্সকে নিয়ে একই সাথে দুটো সত্যের সন্ধানে নেমে পড়ে উইল। এক, ১১ বছর ধরে নিখোঁজ বড় ভাই কেইন যাকে সে নির্দোষ মনে করে তার অবস্থান জানা। আর দুই, কি হয়েছে উইলের ভালোবাসার মানুষ শিলা'র সাথে। কোথায় সে?


১১ বছর আগে খুন হয়ে যাওয়া জুলি'র ছোট বোন কেটি মিলারও জানতে চায় সম্পূর্ণ সত্যটা। তাই হাত মেলায় উইলের সাথে। এদিকে জন অ্যাসেল্টা, যাকে সবাই চেনে ঘোস্ট নামে পেছলে লেগে যায় উইল ও কেটি'র। ভারতীয় উপমহাদেশের কুখ্যাত ডাকাতদল ঠগীদের মতো শ্বাসরোধ করে খুন করতে পছন্দ করে এই ঘোস্ট। ঘোস্টও খুঁজে চলেছে কেইনকে। কেন?


মিলারদের বাড়ির বেজমেন্টে ১১ বছর আগের সেই অভিশপ্ত রাতে আসলে কি ঘটেছিলো আর শিলা রজার্সের অন্তর্ধান রহস্য সম্পর্কে জানতে গিয়ে উইলের সামনে বেরিয়ে আসতে লাগলো একের পর এক তিতকুটে সত্য। তবুও থেমে থাকলো না সে। সত্য যতো তেতোই হোক, উপাদেয় মিথ্যার চেয়ে ভালো - এই নীতি অবলম্বন করে পুরো রহস্যটার শেষ দেখে ছাড়বে এমন পণ করলো উইল। আর তাতে করে অকল্পনীয় কিছু অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হলো ওকে৷


চেনা মুখ হয়ে গেলো অচেনা। বিশ্বাস বদলে গেলো অবিশ্বাসে৷ কে মিথ্যা বলছে, আর কে সত্য বলছে বোঝা কঠিন হয়ে গেলো। আর ভালো-মন্দের কাতারে ফেলে মানুষকে বিচার করার দৃষ্টিভঙ্গিতেও যেন বারবার ফাটল ধরলো উইলের। জমে উঠলো শ্বাসরুদ্ধকর এক জীবনের গল্প, যা ধারণ করে আছে আরো কয়েকটা রহস্যময় জীবনকে।


পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ হারলান কোবেনকে আমি কি বলি, জানেন? টুইস্ট মাস্টার। তাঁর থ্রিলার উপন্যাসগুলোতে এই টুইস্ট জিনিসটার কোন কমতি থাকে না। বরং মাঝেমাঝে একের পর এক টুইস্টের ঢেউ ঠেলে সাঁতার কাটতে কাটতেই সময়ের হিসাব হারিয়ে যায়। 'গন ফর গুড' তাঁর তেমনই একটা মিস্ট্রি ও সাসপেন্স থ্রিলার উপন্যাস।


দ্রুতগতির থ্রিলার বলতে যা বোঝায়, 'গন ফর গুড' তাই। কাহিনিটা শুরু হয়েছে বেশ শান্ত ভঙ্গিতে। কিন্তু ধীরে ধীরে যতোই এগিয়েছে, একের পর এক ধাক্কা খেয়েছি যেন৷ একটা সাধারণ রহস্যকে কিভাবে অসাধারণ রহস্যে রূপান্তরিত করতে হয়, হারলান কোবেন সেটা বেশ ভালোভাবেই জানেন। উপন্যাসের মূল চরিত্র উইল ক্লেইনের ভেতরে নায়কোচিত কোন গুণ ছিলো না। ছিলো না কোন অতিমানবিক ক্যারিশমাটিক ভাবসাব। কিন্তু চাপা পড়া পুরোনো এক সত্যকে মাটি খুঁড়ে তুলে আনার পূর্ণ প্রয়াস ছিলো তার মধ্যে। আর এই ব্যাপারটাই আমার কাছে বেশি রিয়েলিস্টিক মনে হয়েছে।


'গন ফর গুড'-এর আরেক চরিত্র জন অ্যাসেল্টা ওরফে ঘোস্টও ছিলো বেশ ইন্টারেস্টিং। চরিত্রটার কথা মনে থাকবে অনেকদিন। এই উপন্যাসে যতোবার তার ভূমিকার ব্যাপারটা এসেছে, ততোবার আমি নিজেও আতঙ্ক অনুভব করেছি ঠিক উইলের মতোই। শুধুমাত্র উইল ক্লেইন বা জন অ্যাসেল্টা না, প্রত্যেকটা চরিত্রকেই আমার কাছে প্রয়োজনীয় ও শক্তিশালী বলে মনে হয়েছে। কাহিনি বিন্যাস দুর্দান্ত লেগেছে। ধীরে ধীরে জট ছাড়িয়েছেন লেখক। কথাটা আর কিভাবে বলা যায়, জানি না। তবে এটাই সত্যি।


হারলান কোবেন তাঁর 'গন ফর গুড'-কে এমনভাবে সাজিয়েছেন যে পাঠক একবার কাহিনির ভেতরে প্রবেশ করলে বইটা শেষ করার তাগিদ তার ভেতরে আপনা-আপনিই চলে আসবে। আমারো তাই এসেছিলো। তবে শেষ দিকের কিছু ব্যাপার আমি আগেই আন্দাজ করে নিয়েছিলাম। মিলে গেছে। প্রায় দুই মাস পর ৩০০+ পেজের কোন বই পড়লাম। কিন্তু শেষ করার পর মনেই হয়নি যে বড় কলেবরের কোন উপন্যাস পড়েছি।


অনুবাদক সালমান হকের অনুবাদ তাঁর পূর্ববর্তী কাজগুলোর মতোই মানসম্মত ছিলো। সহজ-সাবলীল অনুবাদের কারণে মনেই হচ্ছিলো না যে অনুবাদ পড়ছি৷ আর ভালো অনুবাদের কারণেই বইটা উপভোগ করেছি আরো বেশি।


টাইপিং মিসটেক ছিলো বেশ কিছু। বেশ কয়েক জায়গায় কেইন-কে কেন লেখা হয়েছে। এছাড়াও জজ কোর্ট-কে জর্জ কোর্ট লেখা হয়েছে এক জায়গায়। তবে চিরকুট-এর প্রোডাকশন ছিলো চমৎকার। কাগজের মান ও বাঁধাই ছিলো প্রিমিয়াম কোয়ালিটির। সজল চৌধুরী'র করা প্রচ্ছদটাও চমৎকার লেগেছে।


আমার কপি'র শেষে দেখলাম ২২ তম ফর্মাটা আবারো চলে এসেছে। ভুলক্রমে চলে এসেছে বাঁধাইয়ের সময়। না জানি কোন দুর্ভাগা পাঠকের কপিতে ২২ তম ফর্মাটা মিসিং! তাঁর জন্য আমার এই রিভিউয়েই সমবেদনা জানালাম।


২০২০-এর শেষে এসে আরো একটা চমৎকার থ্রিলার পড়লাম। হতে পারে এটাই এই বছর আমার পড়া শেষ বই। আগ্রহীরা চাইলে পড়ে ফেলতে পারেন 'গন ফর গুড'।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

buttons=(Accept !) days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !