মধ্যবিত্ত প্রেম - আলিফ আহমেদ





বইয়ের নাম : মধ্যবিত্ত
লেখক : আলিফ আহমেদ
ধরণ : উপন্যাস ( রোমান্টিক)
পৃষ্টা সংখ্যা : ১১১
মুদ্রিত মূল্য : ২৪০
প্রকাশনা : পান্ডুলিপি

বাংলা ছবির আপডেট ভার্সন পড়তে চাইলে সাম্প্রতিক তৃতীয় মুদ্রণ হওয়া এই বইটি আপনার জন্য। কারণ, বস্তাপঁচা গদ্য আর সস্তা আবেগের অপরিমিত মিশ্রণে যা তৈরি হয়েছে তার নাম 'মধ্যবিত্ত'। যদি আপনি ভেবে থাকেন বইটি পড়ে মধ্যবিত্ত জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, অপূরণীয় চাহিদা, স্বপ্নের পরাজয়, মরীচিকাময় সুখ, বৃত্তের ভেতর আটকে থাকা জীবন ইত্যাদি সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পারবেন তাহলে আপনার জন্য এক আকাশ সমবেদনা। কারণ আমিও বই পড়ার আগে এসব ভেবেছিলাম। পরে এসবের ছিটেফোঁটাও পাইনি।

প্রধান চরিত্র : বসন্ত ও কুসুম। বসন্ত একজন লেখক ও প্রকাশক। কুসুম একজন সাধারণ পাঠিকা।

কাহিনী সংক্ষেপ : বসন্ত একটা নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে। পরিবারের হাল ধরতে ঢাকায় যান। চাকরি করেন। একটা সময় চাকরি ছেড়ে টিউশনি করেন। কারণ চাকরির টাকায় জীবন চলে না। তারপর এক সময় টিউশনি ছেড়ে দিয়ে প্রকাশনার কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি বসন্ত সাহেব খুব ভালো কবিতাও লেখেন। আর সে কবিতা ফেসবুকে পোস্ট করেন। কুসুম নামের এক মেয়ে বসন্ত সাহেবের লেখা পড়ে তার অন্ধ পাঠিকা হয়ে যায়। শুরু হয় লেখক পাঠিকার লুতুপুতু চ্যাটিং। লেখক তার পাঠিকাকে ইম্প্রেস করতে আরো সুন্দর সুন্দর কবিতা পোস্ট করেন। পাঠিকা সেসব কবিতা পড়ে আনন্দে কাঁদে। তারপর তারা ম্যাসেঞ্জারে প্রেম করে। এভাবে মাত্র ১৩ দিনের মাথায় তারা যশোর থেকে পালিয়ে ঢাকা গিয়ে বিয়ে করে। এই হলো বইয়ের মোটামুটি কাহিনী। আরো বিস্তারিত জানতে বইটি আপনাকে পড়তে হবে।

পাঠ প্রতিক্রিয়া : একজন সাধারণ পাঠক হয়ে স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছি উপন্যাসটি আমাকে একটুও তৃপ্তি দেয়নি। কারণ, উপন্যাসের শব্দচয়ন খুব বাজে ছিল। আর সস্তা প্রেমের গল্প পড়তে পড়তে আমার মতো যেকোনো পাঠক-ই বিরক্ত হয়ে যাবে।
উপন্যাসের ভালো দিক :
১.উপন্যাসে কয়েকটা চুম্বক লাইন আছে যেগুলো ভালো ছিল। যদিও লেখক সাহেব উনার বইয়ের রিভিউ দিয়ে বলেছিলেন প্রতিটি পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায়, পর্বে পর্বে চুম্বকীয় লাইন আছে বাট আমি এরকম কিছু পাইনি।
২. উপন্যাসে সাতটি কবিতা ছিল যার কিছু কিছু লাইন অনেক ভালো ছিল।

খারাপ দিক : উপন্যাসের খারাপ দিকের অভাব নেই। তারমধ্যে প্রধান প্রধান কিছু দিকগুলো তুলে ধরি।
১. বসন্ত সাহেব একজন লেখক হয়ে কেন সে তার প্রেমিকাকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করলো! সে তো পরিবারকে বলতে পারতো। যেহেতু সে বেকার ছিল না। আর একজন লেখক সমাজের কাছে অনেক সম্মানিত মানুষ। তারউপর বসন্ত সাহেবের পরিবার নিম্নবিত্ত। এত্তকিছুর পরেও উনি সবকিছু ছেড়ে কেন পালিয়ে বিয়ে করলেন । লেখক এটা দ্বারা কি বুঝালেন বুঝলাম না।

২. যেহেতু এটা রোমান্টিক উপন্যাস। এখানে প্রেম থাকবে স্বাভাবিক। তো এখানে আবার লেখক প্রেমকে হারাম উল্লেখ করেও কেন ১৩ দিন প্রেম করলেন। বুঝলাম না।

৩. লেখক বলেছিলেন উনার বইয়ে ১০০ এর বেশি উক্তি আছে। তবে এই ১০০ এর মধ্যে গাঁজাখুরি উক্তির অভাব নেই। যেমন ' মেয়েরা প্রশংসা ও উপহারের বিনিময়ে দাগহীন সাদা কাগজে সাক্ষর দিতে প্রস্তুত।' এটা দিয়ে মেয়েদের কতটা নিচু করা হয়েছে জানি না।
আরেক জায়গায় বলেছেন ' জেনারেল পড়ুয়া ছেলেরা মাদরাসায় পড়ুয়া মেয়েদের প্রতি দুর্বল ' এটা কতটা সত্য আমি জানি না।
'পরিবার ও আত্মবিশ্বাসী ছেলেরা ভালোবাসার আগে বিয়ের কথা বলে' ( অথচ লেখক নিজেই আগে প্রেম করেছেন, ভালোবাসার কথা বলেছেন, তারপর বিয়ে করেছেন)

৪. স্বপ্নদোষ, পরকীয়া ইত্যাদি ১৮+ লেখা আছে। বইটি ১৮ এর নিচে কারো পড়া উচিৎ না।

আরো বেশি বললে কেউ কেউ বলবে লেখক সাহেব আমার শত্রু। তাই পরিকল্পিত ভাবে উনাকে হেয় করছি। বিশ্বাস করেন, লেখক কে আমি চিনি না। উনিও আমাকে চিনেন না।

যেহেতু এটা লেখক সাহেবের নতুন বই। তাই উনার প্রতি শুভকামনা রইলো। আর উনার উচিৎ ছিল আরেকটু সময় নিয়ে বইটি প্রকাশ করা। তাহলে আমার মতো অনেক পাঠকের টাকাটা বিফলে যেতো না। যদিও বইটি আমি ধার নিয়ে পড়েছি।

যাইহোক, কারো ফেসবুকের সস্তা গল্প বইয়ের ভেতর পড়তে চাইলে বইটি অর্ডার করতে পারেন৷ বর্তমানে বইটির তৃতীয় মুদ্রণ চলছে।

 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

buttons=(Accept !) days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !