আরণ্যক উপন্যাস pdf download ও রিভিউ


 

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৪-১৯৫০) চাকরিসূত্রে ভাগলপুরে থাকাকালীন সময়ে ১৯২৮ সালের ফেব্রুয়ারীতে "আরণ্যক" (এপ্রিল,১৯৩৯) লেখার পরিকল্পনা করেন। আরণ্যক উপন্যাসটির পরিকল্পনার অভিনবত্ব বিস্ময়কর।এটি সাধারণ হতে সম্পূর্ণ নতুন প্রকৃতির।প্রকৃতির যে সূক্ষ্ম,কবিত্বপূর্ণ অনুভূতি বিভূতিভূষণের উপন্যাসের গৌরব,তা এই উপন্যাসে চরম উৎকর্ষ লাভ করেছে।এ উপন্যাসে লেখক প্রকৃতি'কে মূখ্য এবং মানুষ'কে গৌণ হিসেবে দেখিয়েছেন।বিহারের পূর্ণিয়া জেলায় কুশী নদীর অপর পারের আজমাবাদ,লবটুলিয়া,ইসমাইলপুর সংলগ্ন বিস্তৃত অরণ্যময় অঞ্চলটি হচ্ছে আরণ্যক উপন্যাসের মূল পটভূমি। বন্য-অশিক্ষিত-দরিদ্র-অসহায় মানুষের অদ্ভুত-অজ্ঞাত জীবন-ধারা আর প্রকৃতির ভিন্নতর এক মুগ্ধতার আবেশ তাঁর এ কাহিনীর ক্যানভাস।উপন্যাসটি লিখিত হয়েছে উত্তম পুরুষে।


কাহিনী সংক্ষেপঃ

উপন্যাসের মূল কাহিনী আবর্তিত হয়েছে সত্যচরণ নামের কলকাতার একজন সাধারণ যুবকের জীবনের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বছরকে ঘিরে। বি.এ পাশ করা বেকার যুবক 'সত্যচরণ' তার এক বন্ধুর দাক্ষিণ্যে ভাগলপুরের কাছে এক জঙ্গলাবৃত এলাকায় জমিদার এস্টেটের একজন ম্যানেজারের চাকরি পায়।কয়েক হাজার বিঘা জঙ্গল পরিষ্কার করে খাজনা আদায় এবং প্রজাবিলি করার চুক্তিতে তার চির-পরিচিত ব্যস্ত কলকাতা শহর ত্যাগ করে পাড়ি জমায় বহুদূরে অরণ্যপ্রকৃতির কোলে,বন্যদের মাঝে। প্রথমদিকে গ্রামীণ অরণ্যের নিঃসঙ্গ-নিস্তরঙ্গ-শান্ত জীবনের সাথে তার ব্যস্ততা-কোলাহলমূখরতায় অভ্যস্ত শহুরে মন মানিয়ে নিতে পারে না,স্বভূমি-স্ববান্ধবের অভাব তাকে ব্যথিত করতে থাকে।কিন্তু একসময় এই জঙ্গল তাকে পেয়ে বসে।আস্তে আস্তে প্রকৃতির সৌন্দর্য-মোহে নিজেকে হারাতে থাকে সত্যচরণ,তা উপন্যাসে কথকের নিম্নোক্ত উক্তিটি দ্বারা প্রকাশ করেছেন।


"" এই অরণ্যপ্রকৃতিকে ধ্বংস করিতে আসিয়া এই অপূর্ব-সুন্দরী বন্য নায়িকার প্রেমে পড়িয়া গিয়াছি।যখন ঘোড়ায় চড়িয়া ছায়াগাহন বৈকালে কিংবা মুক্তাশুভ্র জ্যোৎস্নালোকে উদাস আত্মহারা,শিলাস্তৃত ধূ ধূ নির্জন বন্য প্রান্তর! কি করিয়াই আমার মন ভুলাইয়াছে এ চতুরা সুন্দরী!""


এ চতুরা প্রকৃতি সুন্দরীর মায়ায় অনুঘটকরুপে কাজ করেছে উপন্যাসের অপরাপর চরিত্রগুলো-যুগলপ্রসাদ,রাজু পাঁড়ে,ধাতুরিয়া,ধাওতাল সাহু,মঞ্চী,কুন্তা,নকছেদী ভক্ত,রাজা দোবরু পান্না,রাজকন্যা ভানুমতী -আরও কত চরিত্র,কত বিচিত্র জীবন!এরা প্রত্যেকেই শহরবিচ্ছিন্ন অরণ্য লালিত নিচুতলার মানুষ।উপন্যাসের শুরুতে কথকের কাছে এরা নিতান্ত বর্বর বলে গণ্য হয় কিন্তু সময়ের পথচলায় একসময় তিনি নিজেকে এদের জীবন-প্রবাহে এমনভাবে অঙ্গীভূত করেন যে,নিজেকেই এদের রহস্যময় সরল সাধারণ জীবনে অপাংক্তেয় মনে হতে থাকে,এরাই তার কাছে হয়ে ওঠে একেকজন বিস্ময়মানব।

এ উপন্যাসে লেখক প্রকৃতির নিবিড় রহস্যময়তা,মায়ালোক আর আদিমতায় খুঁজে পেয়েছেন জীবনের গাঢ়তম রুপ;দেখেছেন মানুষের বিচিত্র প্রবণতা আর উপলব্ধির নব নব রুপায়ন।অভিনব দৃষ্টিকোণ থেকে অভিজ্ঞতা আর বিশেষণের নবত্বে তিনি (বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়) সাজিয়েছেন পুরো কাহিনী। উপন্যাসের নায়ক সত্যচরণ অরণ্য প্রকৃতির গভীর থেকে গভীরে প্রবেশ করেছেন--সৌন্দর্যৈশ্বর্যের যে অনির্দেশ্য-অব্যক্ত রহস্য থরে থরে সাজিয়েছেন প্রকৃতি মাতা,তার সন্ধান করতে গিয়ে সে আবিষ্কার করেছে কী অদ্ভুত রোমান্স, এ মুক্ত জীবনে প্রকৃতিঘনিষ্ঠ নিবিড় পরিবেশের আনন্দ কী অনির্বচনীয়! 

কেবল নির্জনতম প্রকৃতির প্রেমই নয়,সেখানকার মানুষের ঐতিহ্যকে নিজের মধ্যে লালিত করতে চেয়েছে সে।অনেকক্ষেত্রেই প্রকৃতির রুপ-রস-গন্ধ সত্যচরণকে যতটা ভাবুক বানিয়েছে,তার থেকে বেশি প্রভাবিত করেছে বুনো মানুষের সহজ-সরল জীবন-প্রণালী।

নিভৃত অরণ্যচারী চরিত্রগুলোর সবারই জীবন-স্বপ্ন-মনের ভাষা আলাদা,সত্যচরণ এদের মনের ভাষা পড়তে চেষ্টা করেছে,পরম মমতায় বর্ণনা করেছে তাদের স্বপ্নকথাগুলো,তার তীক্ষ্ণ অন্তর্ভেদী দৃষ্টি অব্যহতি দেয়নি জীবনের এক টুকরো সৌন্দর্যকেও।


প্রকৃতির সাথে তার কি প্রকট যোগ তা আমরা দেখতে পাই,যখন চাকরি অবসানে অবশ্যম্ভাবী ধ্বংসের মুখোমুখি অরণ্যপ্রকৃতিকে পেছনে ফেলে কলকাতায় পুনর্যাত্রাকালে আক্ষেপ করে সত্যচরণ বলে,

"হে অরণ্যানীর আদিম দেবতারা, 

ক্ষমা করিও আমায়।"

উপন্যাসের শেষে সত্যচরণের এই খেদ,অন্তর্বেদনা পাঠক মনেও সঞ্চার করে শূন্যতার অনুভূতি।

সবমিলিয়ে নির্জন মায়াবী অরণ্যের বর্ণনা, সেখানকার হতদরিদ্র মানুষের জীবনসংগ্রাম,তাদের রোগ-শোক,আনন্দ-উচ্ছ্বাস,অভাব,আবেগ এবং বিভূতিভূষণের প্রগাঢ় জীবনদর্শনের সম্মেলনে আরণ্যক হয়ে উঠেছে মনের গহীনে বেঁচে থাকার মতো কালোত্তীর্ণ এক আখ্যান।


আরণ্যক উপন্যাসটি যখন লেখা হয়,তখন সত্যচরণ কলকাতা শহরের বাসিন্দা।তবে,মাঝে মাঝেই তার মনে পরে সেই যুবক বয়সের উত্তর বিহারের বিশাল অরণ্যভূমিতে কাটানো সময়ের কথা।বিভূতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসটি অনেকেই ভ্রমণ উপন্যাস বললেও আসলে কিন্তু তা নয়।বিভূতিভূষণ অনেক জায়গায় ঘুরেছেন,দেখেছেন,থেকেছেন।তাই,তিনি অভিজ্ঞতার চোখ দিয়ে যা দেখেছেন তা তার সাহিত্যের মধ্যে ফুটিয়ে তুলেছেন।


আরণ্যক pdf ডাউনলোড করতে

এখানে ক্লিক করুন    ]

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

buttons=(Accept !) days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !